- Md. Ahsan Ansari | VIII - B (BM-MS)
এক.
খুব নম্র-ভদ্র মেয়ে রিতা। বয়স ১২ বছর। পড়ে ক্লাস সেভেন এ। ছাত্রী হিসেবে বেশ ভালো। বিজ্ঞানের প্রতি ছোটবেলা থেকেই আকর্ষণ অনেক বেশি। সময় পেলেই ঝাপিয়ে পড়ে বিজ্ঞানে ; কল্পবিজ্ঞানের জগতে। এছাড়াও রিতা একজন প্রকৃতিপ্রেমি। বাড়ির ছাদে – উঠানে বিকালে ঘুরে বেড়া তার দৈনিক কার্যাবলির মধ্যে অন্যতম।
দুই.
রিতাদের বাড়ি হাঁটুভাঙা গ্রামে। গ্রামের নামটা অদ্ভুত হলেও প্রকৃতির রূপ অতুলনীয়। গ্রামটি নিরিবিলিও বটে; বেশ কিছু দূর পরপর ক’টা করে বাড়ি। লোকও তেমন নেই এই গ্রামে। একদিন হঠাৎ রিতাদের বাড়ির পিছন দিক থেকে একটি কম্পন অনুভূত হলো। সবাই মনে করেছিল হয়তো মৃদু কোনো ভূমিকম্প হয়েছে। সেদিন বিকালে রিতা কি মনে করে যেন বাড়ির পিছনের উঠানে যায়। এমনিতে সে বাড়ির পিছনে খুব কমই আসে। বাড়ির পিছনের দিকটাকে ছোটো-খাটো জঙ্গলের সাথে তুলনা করলে কম হয় না।
তিন.
উঠানে গিয়ে রিতা দেখতে পেল কিছু গাছ বাঁকা মনে হচ্ছে। কৌতুহলী মানব মন সামনে না গিয়ে থাকতে পারল না। সামনে গিয়ে সে যা দেখল তা দেখার জন্য মোটেও সে প্রস্তুত ছিল না । হকচকিয়ে গেলো সে। চিৎকার করতে চাইলেও পারছিল না। কেউ যেন তার গলা চেপে ধরে আছে। হঠাৎ কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল সে। জ্ঞান ফিরলে দৌড়ে চলে যায় বাড়িতে। কাউকে কিছু বলার আগেই সে নিজের ডায়েরিতে লিখে রাখে কী ঘটেছিল তার সাথে। বলাই বাহুল্য, রিতার কাছে সে ও তার ডায়েরি উইকিপিডিয়ার থেকেও বোধহয় বেশি গ্রহণযোগ্য। রিতা কেমন যেন অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। কাঁপা হাতে লিখে রাখে যা সে দেখেছিল বাড়ির পিছনে। আরও লিখে রাখে সে এখনই আবার সেখানে যাবে। কারণ সে এখনো নিশ্চিত না সে যা দেখেছে তা ঠিক কি-না। আর অনিশ্চিত থাকতেই কাউকে ডেকে এমনি এমনি কিছু বলা শিশুসুলভ আচরণ বৈ-কি আর কিছু না। যদি সে না ফিরে আসে তবে তার পরিচিত কেউ যদি তার নিখোঁজ হওয়ার পর তার ডায়েরির এই কথাটুকু পড়ে তবে যেন সে বুঝে নেয় আমরা সর্বোন্নত প্রাণী নয়। বরং লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অন্য কোনো গ্যালাক্সিতে রয়েছে আমাদের চেয়েও অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী। তবে এমন কি দেখল রিতা যে সে এ কথা বলল? রিতাও নিজে এ ব্যাপারে নিশ্চিত না। কেমন জানি তার অজান্তেই তার হাত স্বতন্ত্র হয়ে উঠে এগুলো লিখে ফেলছে। কল্পবিজ্ঞানের প্রতি বেশি আসক্তির কারণেও এরকম হতে পারে তার।
চার.
সন্ধ্যা নেমে এলো। রিতা আর সেখানে গেলো না। তার মন কেমন একটা খচখচ করতে লাগল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল বাইরে। একদিকে সেখানে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অন্যদিকে যাওয়ার ভয় তাকে যেন উভয় সংকটে ফেলে দিয়েছে। রাতে ভালো ঘুমাতে পারল না সে। দুপুর বেলায় সে তাদের বাড়ির পিছনে যেতে প্রস্তুত হলো। এটাও লিখে রাখল তার ডায়েরিতে। থমথমে পায়ে এগোতে থাকল সে বাড়ির পিছনের দিকে।
পাঁচ.
বাড়ির পিছনে গিয়ে সে যা দেখল তাতে তার চোখ কপালে উঠে গেল। না, তবে কাল যা দেখেছিল তা আসলেই সত্যি! মাটি চিরে একটা গর্ত হয়ে গিয়েছে। গর্তের মধ্যে উল্কার মতো দেখতে কিছু একটা। সেটা উল্কাপিণ্ড হতে পারত; তবে না, সেটি একটি স্পেসশিপ। কারণ গর্তের পাশে তার মতো দেখতে অবিকল রিতা। রিতা এরকমও কল্পকাহিনী পড়েছিল যে এলিয়েনরা মানুষকে কপি করতে পারে। রিতা আর বেশি চিন্তিত হলো না। তার মস্তিষ্ক মনে হয় অন্য কিছুর সাথে অদৃশ্য তরঙ্গের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। রিতার মতো মেয়েটি আসল রিতার কাছে আসল।
রিতা চাপা গলায় বলল- “ক ক ক….কে?”
-“আমি রিতা”
-“রিতা?”
-“হ্যাঁ। আমার নাম রিতা”
-“ক ক ক.. কিন্তু তুমি দেখতে কি আমার মতো নও? এটা কি সম্ভব?”
-“হুম। সম্ভব।”
-“সম্ভব!”
-“হ্যাঁ।আমি তোমার ব্রেইনের এক একটি নিউরন পর্যন্ত স্ক্যান করে নিয়েছি।তোমার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো করে গড়া আমার শরীর। তাই আমি ইয়ে মানে তুমি দেখতে হয়েছ আমার মতো”
কাউকে কোনো ব্যাপারে কটাক্ষ করতে রিতা ‘ইয়ে মানে’ কথাটা বলে। তবে তো এলিয়েন সত্যিই রিতার মস্তিষ্ক….!
রিতার মন থেকে অস্থিরতা কাটতে লাগল।
কিছুক্ষণ ভেবে হঠাৎ সজোরে বলল -“আমি তোমার মতো হয়েছি মানে? তুমিই তো বললে তুমি আমার সবকিছু নকল করেছ। আবার বলছ আমি তোমার মতো?”
-“দেখ, আমি কিন্তু তোমার মস্তিষ্কই ব্যবহার করছি।তাই আমি যা বলছি তা তোমারই কথা।এতে আমার কোনো দোষ থাকার কথা নয়”
-“তুমি আমার মস্তিষ্ক ব্যবহার করছ,আমার মতো রূপ ধারন করেছ এতে তো দোষের কিছু নেই না। কেন তোমার কি নিজের শরীর বা মস্তিষ্ক বলতে কিছু নেই যে আমার সাথে ভাগ বসাতে এসেছ।”
-“দেখ তোমরা পৃথিবীবাসীরা সত্যিই আস্ত গর্দভ। নইলে এ কথা বলতে না। তোমাদের কাছে কোনো প্রাণী হলেই তার চোখ-মুখ-হাত-পা থাকতে হবে। আসলে আমাদের শরীর বলতে কিছু নেই। তবু আমরা তোমাদের থেকে বৃহদাকার। আমাদের মস্তিষ্ক নেই তবে আমাদের বুদ্ধিমত্তা তোমাদের আইনসটাইনের থেকে অকল্পনীয় গুণ বেশি। আর আমি যদি আমার আসল রূপে তোমার সামনে আসতাম তবে তুমি ভয় পেয়ে মারা যেতে পারতে।”
-“দেখ তুমি যত বড় লাটসাহেব-ই হও না কেন তুমি কিন্তু অহংকার করছ।”
-“তুমি কিন্ত আবার ভুলে গিয়েছ যে আমি তোমার মস্তিষ্ক ব্যবহার করছি। আর হ্যাঁ আমাদের গ্যালাক্সির কথা বলি। সেখানকার একটি নিয়ম হলো আমরা আমাদের সীমানার বাইরে যে স্থানে যাব সেখানে যদি কোনো বুদ্ধিজ্ঞানসম্পন্ন প্রাণী থাকে তবে তার দৈহিক গঠন ও বুদ্ধিমত্তা আমাদের নিজেদের বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে।”
তুমি এসেছ কোত্থেকে?”
-“আমি এসেছি GN-z11 গ্যালাক্সি থেকে “
-“কি বললে?”
-“GN-z11” “তোমাদের হিসেবে পৃথিবী থেকে ৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। “
-“৩২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ! “
-“হুম”
-“আচ্ছা ধরে নিলাম তুমি তোমার স্পেসশিপকে আলোর বেগে করে পৃথিবীতে নিয়ে আসলে।তাও তো তোমার ৩২ বিলিয়ন বছর লাগবে সেখান থেকে পৃথিবীতে আসতে।”
-“উহ! আসার আগে পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে যেমনটা পড়েছিলাম, দেখছি তোমরা ঠিক তেমনই। তোমরা নিজেদের সর্বেসর্বা মনে কর।আমাদের কাছে আলো নিম্ন-মধ্যম বেগের তরঙ্গ।আমরা আলোর থেকে ১৬বিলিয়ন গুণ দ্রুত চলতে সক্ষম। আর স্পেসশিপের তো কথাই নেই। এখানে আসতে আমার সময় লেগেছে মাত্র ১৩ মিলি সেকেন্ডে।”
-“তোমাদের বিজ্ঞান যদি এতই সুদূরপ্রসারী হয়, তবে তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন কী? “
-“অনেক কিছুই তো আছে। এই যেমন 7Dimensiom আবিষ্কার।তবে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় কি জানো?”
-“কী?”
-“আমি যাকে কপি করি তার মস্তিষ্ক থেকে তাকে কপি করার কথাটুকু ভুলিয়ে দিতে পারি”
এই বলে এলিয়েনটি রিতার মাথায় হাত রাখতে আসে।
রিতা বুঝতে পারে সে আর জানবে না এলিয়েন বলে কিছু আছে। তবে সে তো এখানে কিছুই করতে পারবে না।
ছয়.
ছমছমে রাতের ঠাণ্ডায় অনেকক্ষণ ঘুমায় রিতা। ঘুম থেকে উঠলে কেমন যেন মাথাব্যথা করতে থাকে। ভুলে যায় সে সব ঘটনা। সেটি কি আদৌ সত্য ছিল ; নাকি সবই স্বপ্ন। আচ্ছা সে যে এখন ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা অনুভব করল এটি কি সত্য? আমি যে এখন এটি লিখছি এটি যে স্বপ্ন নয় তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? রিতা যদি তার ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সেই লেখাটি পড়ত বা বাড়ির পিছনে যেত তবে সে বুঝতে পারত তা আসল কি না স্বপ্ন। তবে ঐ এলিয়েন তো আর এতো বোকা হবে না।
2 thoughts on “স্বপ্ন নাকি সত্য”
Wow! Amazing! I am very glad to see my writing here in the RCSC official website. I can’t express my feelings in words.
BTW, Congrats,RCSC..for launching the website.. I hope that the coming days will be more beautiful for you, RCSC.
Take my boundless love.💝
Have u read “Tituni and Tituni” by Zafor Ikbal??